যে পাথরে ফুল ফুটেছে-১ [রোমান্টিক/সুপারহিরো]

 



এক


এখন মধ্যরাত। চারপাশে নিখাদ অন্ধকার । কিন্তু কেউ জেগে নেই। রবিনদের বাড়ির চারপাশে ঘন গাছের সারি। তবে রবিনদের এই বাড়িটি কিন্তু বেশ পুরনো নয়। আজ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগেই এটা তৈরি করা হয়েছে। রাত ৯ টা নামতেই রবিন নেমে আসে তার বাসা থেকে নিচে। না, এটা কোন ধরনের প্রেম ঘটিত ব্যাপার নয়। তবে রবিন এসময় বের হয় অন্য কাজে।


আজ থেকে ঠিক ২ বছর আগে যখন করোনা চলছিল। তখন একদিন রবিন বেশ হন্তদন্ত  হয়ে ফার্মেসিতে যাচ্ছিল। কারণ তার বাবা করোনা আক্রান্ত ছিল। জায়গাটা একটু নির্জন হওয়াতে তার বাসা থেকে বেশ দূরে ছিল ফার্মেসি। বাসাটা একটু ভেতরে হলেও বেশ দূরে ছিল ফার্মেসিটা। অন্তত ৫ মিনিটের পথ।


ঠিক সেদিনই ঘটলো ঘটনাটা। রবিন একটা বটগাছের ঠিক কাছাকাছি আসতেই যেন তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে অতলে নিচের দিকে চলে যেতে শুরু করলো।


কিছু দেখার আগেই সে লক্ষ্য করল আস্তে আস্তে আলোর দিকে ক্রমশ ধাবিত হচ্ছে। ওমা এটা কি জায়গা?  হতবিহব্বল হয়ে সে চিন্তা করলো, এমন জায়গা তো তার আসার কথা নয়। ঠিক তারপর পরই তার সাথে ঘটতে শুরু করল চমকপ্রদ এক  ঘটনা।


একটা অদ্ভুত জায়গায় সে এসে পৌঁছালো যেন। তার চারপাশে প্রচন্ড আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে।


এ কোথায় এলাম আমি? সে নিজেকে প্রশ্ন করছে সেই পতনের মুহূর্তে।


তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধা করে উঠলো। দু সেকেন্ড চোখ বুঁজে রইল। চিন্তা করতে লাগলো কি হচ্ছে আমার সাথে? এমন সময় একটা গুরুগম্ভীর  আওয়াজ এল।


“চোখ খোলো।”



চোখ খুলে  সে অবাক হয়ে গেল। 


-কে আপনি?


প্রশ্নটা করতে করতে মনে হল সে খুব অদ্ভুত একটা পুরনো জগতে চলে এসেছে যেটা তার সভ্যতা থেকে অনেক অনেক পেছনে।


লোকটার বেশভূষা খুব আধুনিক কিন্তু আশেপাশের দালান বাড়ির চেহারা সুরত অন্যরকম।


রবিন জিজ্ঞেস করল, “আমি এখানে কিভাবে এলাম কিছুই বুঝতে পারছি না।”



লোকটা বলতে লাগলো, “আসলে তুমি আমাদের দ্বারাই দিক নির্দেশিত হয়ে এখানে এসেছ। তোমার নির্ভীক হৃদয় আমাদের মন কেড়েছে।”


-তো এখন কি? কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন?


তোমাকে এখানে আনার মূল উদ্দেশ্য হলো তোমাকে একটা ভালো শক্তির অধিকারী করা।


শক্তি মানে? আপনারা কি শক্তি বানান?


না, ঠিক তা না। আমাদের এখানে একটা বাতি আছে। সে বাতি ধরলেই আমাদের শরীরে একেক রকম অদম্য শক্তি সঞ্চার হয়। 


মানে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন সুপার হিরো পাওয়ার?


একদম তাই।


দু মিনিটের ভেতর রবিনকে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে। সেই জায়গাটা দেখতে খুবই অদ্ভুত। চারপাশটা গোল হয়ে ঘিরে রেখেছে সেই বাতিটাকে। একটা পাথরের চাঙ্গরের উপর যেন সেটা বসানো হয়েছে।


-হাত দাও এটার উপর। 


শুনে কিছুটা ইতস্তত বোধ করল রবিন। কিন্তু সে ঘাবড়ালো না। বাতিটার উপর একটু হাতটা রাখতেই তার গোটা শরীরে যেন একটা অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল। একি? 


হঠাৎ করেই শরীরটা ঝাঁকি খেয়ে উঠলো। দৃশ্যত চারপাশ সাদা হয়ে গেলো। রবিন বুঝতে পারলো না সে কোথায় এসেছে। এরপর চোখ সয়ে এলে বুঝলো সম্ভবত তাদের খিলগাঁওয়ের আশেপাশে কোন একটা আবাসিক এরিয়াতে এসে পড়েছে। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো। না এখানে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি।


এমন সময় রবিন দেখতে পেল যে একটা মেয়ে বারান্দায় এসে চুল আঁচড়াচ্ছে রাতের বেলা। 


এত সুন্দর অপরূপ চেহারা দেখে রবিনের মনে প্রশ্ন জাগলো, এত সুন্দর হতে পারে কোন মেয়ে?


তার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে মেয়েটা কটমট দৃষ্টিতে বলল, “এত রাতে এখানে কি করছেন আপনি? অসভ্য বেয়াদব। একটা মানুষের প্রাইভেট এরিয়াতে ঢুকে তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার মানেটা কি?”


রবিন তাকে দেখে বলল, স্যরি আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি এখানে কিভাবে এসেছি। আমি এখনই চলে যাচ্ছি। 


এমন সময় রবিনের মনে পড়লো তার বাবা অসুস্থ করোনায়। সে কিছু না ভেবেই হুট করে দৌড় মারতে শুরু করতে যাবে এমন সময় বুঝতে পারল যে সে আকাশে উঠে গেছে।


আরে এটা কি মানুষ না এলিয়েন? এভাবে কেন দৌড়াচ্ছে?


মেয়েটা হতচকিত হয়ে গেল। তিন সেকেন্ড এর  ভেতরে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে  ধপাশ করে পড়ল।

Post a Comment

Previous Post Next Post