আমিই জুজু || pdf

এক.

জানেন রহস্যের কোন জায়গাটা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী করে তোলে আমাদের? সেই জায়গাটা হচ্ছে অজানা ভয়ের। ভয়টা কেটে গেলে আমরা হয়ে উঠি সাহসী। বেশীরভাগ মানুষই দেখবেন বলে আমি হেন আমি তেন। কিন্তু রাতের তিনটা বাজে ঘরের সদর দরজা জানালা সব খোলা রেখে টয়লেটে যেতে বলেন।

ও ও। বেশি বলে ফেললাম। জুজুকে চেনেন? আরে সিলেটের ছেলে তাজিন আরকি। ওর সেই যে জুজুর কাছ থেকে ইনফেকশাস হওয়া আর এর পর তো নাম হয়ে গেলো জুজুমানব।

সে যাই হোক চলে যাই গল্পে। তাজিন এখন পাকা তরুন। মানে আরেকটু হলেই টুপ করে যুবক হয়ে যাবে। প্রেমিকাও আছে তার। দেখতে সুন্দরী। তাতে কি? নায়ক থাকবে নায়িকা থাকবে না এটা আপনি ভাবতে পারেন কিভাবে?

ধুর, গল্পেও গেলাম না।

সেদিন সন্ধ্যা। সিলেটের চা বাগান অঞ্চল। জানেন তো বিশাল বড়। নতুন ম্যানেজার এসেছেন শানিমা টি এস্টেটে। জেনে শুনেই জয়েন করেছেন। এ এস্টেট ভালো না। রাত বিরেতে কতো কিছু হয়। কি হয়?

জুজু আসে? নাহ। জুজু তো আসে ফেব্রুয়ারিতে। ও আচ্ছা।

জন্তুর মতো। শরীরের মাংসপেশি চওড়া। জলপাই রংয়ের। গতকাল সন্ধ্যায় সামাদ চৌকিদার এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় লাশটা। হুট করে ঝোপের ভেতর মস্ত সেই জলপাই রংয়ের শরীরটা ঢুকে যেতে দেখে। আজ দিনে কাজ ভালোই চলছিলো।

তবে আজ বিকাল হওয়ার আগে থেকেই শ্রমিকেরা ছুটি নেয়া শুরু করে আতংকে। জলপাই দানব খুব একটা যে ঘন ঘন মানুষ খুন করতে আসে তা নয়। এই খুনের বিষয়টা রহস্যময়।

রহস্যের কিনারা করতেই ম্যানেজার পাশের স্টেটের ম্যানেজারের ছেলে জুজুকে ডাকেন। অর্থাৎ আমরা যাকে তাজিন নামে চিনি।

-বাবা তাজিন। তোমার তো জুজু শক্তি আছে। দেখো না একটু।
-ঠিক আছে আংকেল। আপনি চিন্তা করবেন না।

দুই. https://goo.gl/5zXbna

সেদিন রাতে আমাদের জুজুমানব শানিমাতে এলো। সুন্দর শুভ্র ছেলে। ঝোপের আড়ালে কাভার নিলো। তিন মিনিট পর পায়ের আওয়াজ গেলো। গম্ভীর আওয়াজ। হঠাৎ মিলিয়ে গেলো। এরপর আরেকটা এলো। এবারের টা হালকা। এটা মানুষ।

ঝোপ থেকে একটু উকি মারতেই দেখা গেল লোকটাকে। লম্বা লিকলিকে গড়ন। চোখে চশমা। হাতে সিরিঞ্জ। এরপর ধুপ ধাপ আওয়াজ। আবার এসেছে জন্তুটা।

-ঘর ঘর... আওয়াজ বেরুচ্ছে সাত ফিট লম্বা দু পেয়ে শদন্ত জন্তুটার মুখ থেকে।
-ও মাই গুড বয়। লক্ষী ছেলে। আসো তোমাকে ঔষধ দেই।

সিরিঞ্জ ঢোকানোর সাথে সাথে কুই কুই করে উঠলো জন্তুটা। চোখ হঠাৎ করে লাল হয়ে উঠেছে তার।
-লক্ষী ছেলে। যাও এবার। আমার কাজ শুরু হবে।

জন্তু চলে গেলো ঝোপ ধরে। এবার তাজিন লম্বা লিকলিকে কিম্ভুত চেহারার লোকটার পিছু নিলো। লোকটা শানিমা টি এস্টেট এর বাংলোর গেটে দাঁড়ালো।

-কাকে চান?
-ম্যানেজার সাহেবকে বলেন হাফিজ সাহেব এসেছেন।

দুই দারোয়ানের একজন এসে ম্যানেজারকে বললো,
-স্যার হাফিজ সাহেব...
-উফফ লোকটা! আচ্ছা আসতে বলো।
-আচ্ছা স্যার।

সুপরিসরে বিশাল ড্রইং রুম। হরিণের চামড়া দেয়ালে ঝোলানো। বিশাল সব দামী চিত্রকর্ম কপি করে ফ্রেমে বাঁধানো। হাফিজ বসেছেন সোফায়। নরম গদির সোফা।
-আরেহ হাফিজ সাহেব যে।
-স্যার কেমন আছেন?
-এই তো ভালো। বলেন কেমন যাচ্ছে?
-স্যার বোঝেন তো আমার বায়ো কেমিস্ট্রি ক্যারিয়ার। আপনাকে দিয়েই শুরু করতে চাই।
-দেখেন হাইব্রিড ফরমুলা স্ট্রিক্টলি প্রোহিবিটেড। চা পাতার ব্যবসায় আমরা অরগানিক। আপনার হাইব্রিড ফর্মুলা যেমনি হোক না আমরা বাজারে হাইব্রিড চা পাতা ছাড়লে তারতম্য কাস্টমাররা ধরে ফেলবে। আপনি খুচরা বাজারের চা বাগানগুলিতে চেষ্টা করে দেখুন।
-স্যার প্লিজ।
-নো মানে নো। স্যরি হাফিজ সাহেব।
-যা বললেন এর জন্য পস্তাতে হবে আপনাকে।
গটগট করে বেরিয়ে এলো। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সেদিকে তাকালেন ম্যানেজার।

তিন.

সাথে সাথে তাজিনও ঢুকলো। জুজুর বেশ।
-জুজু! ভয় পেয়ে আঁতকে উঠলেন ম্যানেজার।
-আরেহ না আমি! বেশ পাল্টে গেলো তাজিনের।
-ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। লোকটা হুমকি দিয়ে গেলো। ম্যানেজার বললেন। বেশ এগ্রেসিভ মনে হয়েছিলো।
-সেই ওই জন্তুটা পালছে। জলপাই রংয়ের।
-মাই গড।

এরই মধ্যে, চারপশে তাকিয়ে গেটের আরো একশো গজ সামনে এসে শীষ বাজালো হাফিজ। জলপাই রংয়ের দু পেয়ে জন্তুটা এলো হামাগুড়ি দিয়ে।
-ঘোৎ! কি করতে হবে?(এক সাথে তিন চারজনেএ মোটা গলা তার মুখ থেকে বেরুলো।)
-প্রথমে দারোয়ানদের শুইয়ে দাও।  তারপর ম্যানেজারের মেয়েকে ধরে বেজে নিয়ে আসো। আমি যাচ্ছি।

-কে কে ওখানে? দুর থেকে দারোয়ানের গলা ভেসে এলো।
দশ সেকেন্ড, ত্রিশ সেকেন্ড, এর পর এক মিনিট পার হয়ে গেলো।
ধুম করে কি একটা যেনো গেটের সামনে এসে পড়লো।
-ইয়া আল্লাহ! দারোয়ানেরা চিৎকার করে উঠল্য।

-আরে! গেটে আওয়াজ না? তাজিনের কান খাড়া হয়ে উঠলো।
-আমি আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে সেফে যাচ্ছি। তুমি কিছু করো।

ততোক্ষণে দারোয়ানেরা মার খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তাজিন গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
-আজিব! কোথায় গেলো জলপাই?!

হঠাৎ ভেতর থেকে চিৎকার ভেসে এলো।
জুজুমানব এক দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। ম্যানেজার মাটিতে হাত পা ছাড়িয়ে অগোছালোভাবে পড়ে আছেন। তার অজ্ঞান হয়ে এক দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছেন।
-তাজিন সব শেষ। আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে।

চার.

ক্রুদ্ধ স্বরে তাজিন হুংকার ছেড়ে বেরিয়ে এলো। জুজুমানবের আজ তেজ বেড়ে গেছে। রাগত স্বরে গর গর করে ছুটলো গন্ধ শুঁকে শুঁকে।

রাত তখন পৌনে দশটা। অপারেশনে নেমেছে র‍্যাব।শানিমা বা এর আশেপাশে জলপাইকে পেলে শুট করে মারার নির্দেশ আছে। বিড়ি খাচ্ছিলো র‍্যাব গাড়ির ড্রাইভার। সাই করে তার কানের পাশ দিয়ে কি যেনো ছুটে গেলো। এতো ক্ষিপ্র গতি যে স্পীডোমিটারই ক্যাত কুত করে চিৎকার দিতে লাগলো।

-আল্লাগো। মাইরালাইলো আমারে।! ড্রাইভারের প্যান্ট ভিজে গেছে।
-অ্যাই শালা চোপ। র‍্যাবের একজন ধমক দিলো।

জলপাই বেজে ঢুকেছে। হাফিজ নেই। হয়তো খেয়ে দেয়ে ল্যাবে ঢুকবে।
-কি কেমন লাগছে বলো। জলপাই মেয়েটাকে মুখ বেধে রেখেছে চেয়ারের সাথে দড়িতে আটকে রেখে।
-হুম্ফ। হুম্ফ!
-ওহ স্যরি। তোমার তো মুখ বাধা! দাড়াও খুলে দিচ্ছি।
-শালা কুত্তার বাচ্চা! তুই শুধু আমাকে দড়ি খুলতে দে। দেখ তোর একদিন কি তোর বস হাফিজের একদিন।
-আরে আরে! পোড়া মরিচ দেখছি! জলপাই তুমি এ কাকে নিয়ে এলে? হাফিজ ঢুকেই বললো।

এমন সময় মূল দরজা ভেংগে জানালা সহ এক পাশের পুরোটা ধ্বংস করে ভেতরে ঢুকলো আমাদের জুজুমানব ওরফে তাজিন।
-হেল্ল ইয়াহ। কি খবর? কেমন আছো?

পাচ.
জলপাই রঙা দানব হুট করে সামনে চলে এলো জুজুমানবের সামনে। এমন সময় ক্ষিপ্র গতিতে লাফ দিয়ে তাজিন সরে এলো। জানে জলপাই খামচে ধরলে তার মতো জুজু ফুজু ও কুপোকাত হয়ে যাবে।

হঠাৎ করে মাথায় এলো ম্যাকাপ ট্রেণিং এর কথা। এজেন্ট জাহেদ শিখিয়েছিলো কি করে শত্রুকে পাজলিং করতে হয়। অবশ্য সেটা নিয়ম মেনেই। তাজিন যখন জুজুতে ফর্ম করে তখন তার ক্ষিপ্রতা বেড়ে যায়। আঙুল সরু ও ধারালো হয়। কিন্তু জলপাইয়ের মতো সে লম্বা হতে পারেনা। ক্ষিপ্রতাকে কাজে লাগিয়ে লাফিয়ে জলপাইয়ের ঘাড়ে চড়লো জুজুমানব।

টিট টিট। টিট টিট।

কোথাও অ্যালার্ম বেজে উঠেছে। সেটা হাফিজের হাতেই। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়েই চেঁচিয়ে উঠলো হাফিজ।
-ওহ শিট! হোয়াট দ্য হেল্ল। জলপাইয়ের টিকা।

যা বুঝার বুঝে গেছে তাজিন ওরফে জুজুমানব। গলা খামচে ধরেছে জলপাইয়ের। জলপাই দানব হাসফাস করতে করতে ছিটকে পড়লো একটা তেলের ড্রামের উপর তাজিন সহ।
"ইক্ক" মাথা ঢুকে গেছে উপরের ঢাকনি ভেংগে।

"আর ত্রিশ সেকেন্ড। উ শ্যেট! সবুর জলপাই থেকে মানুষে ট্রান্সফরম করবে" হাফিজ চেঁচিয়ে যাচ্ছে।

"এবার পালাবে কোথায় চান্দু?" জুজুমানব এসে দাঁড়িয়েছে।

হঠাৎ হাতে থাকা একটা স্মোক গানে ট্রিগার টিপে দিলো সে। চারপাশ ধোয়ায় ভরে গেলো। মিনিট দুইয়ে স্বাভাবিক হলো পরিবেশ। শানিমা চা বাগানের ম্যানেজারের মেয়ে তুলি জ্ঞান হারিয়ে চেয়ারে বসে আছে।  ধোয়ায় আচ্ছন্ন হওয়ার আগে ভাগ্যিস ড্রাম থেকে সবুর ওরফে জলপাইকে তুলে ফেলেছিলো তাজিন। ততোক্ষণে র‍্যাবও চলে এসেছে। উচ্চ রেংকের হওয়াতে তাজিনকে স্যালুট দিলো।

-তাজিন তোমার এই দেনা কিভাবে শোধ করবো বাবা?
-আংকেল এটা আমার দ্বায়িত্ব ছিলো।
-এরপরো আমি কৃতজ্ঞ রইবো।

প্যারামেডিকের পেছনের সিটে এসে বসলো তাজিন। হঠাৎ খপ করে তুলি তার হাতটা ধরলো।
-জুজু সাহেব।
-জ্বি বলুন।
-বাবা জানেনি তো?
-উনি নিজেই তো তোমার দেখভালের বিষয়টা দেখতে বলেছেন।
-তবেরে শয়তান! ফন্দি আটা হচ্ছে?! অ্যাঁ?!

এই হলো তাজিনের প্রেমিকা। যাদের অনেকদিন ধরেই মনের লেনদেন চলছে। মনের গভীর থেকে। যেখানে প্রেম নদীর স্রোত বয়ে যায়। দুটো মনের মোহনা মিশে যায় নিরন্তরে।

Post a Comment

Previous Post Next Post